Constitution Day of India 2024: এটি কী এবং কেন আমরা এটি উদযাপন করি?

Constitution Day of India: আপনারা কি জানেন যে ২৬শে নভেম্বর শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়, বরং এটি ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তোলার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত? এটি সেই দিন, যখন আমাদের দেশের সংবিধান আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। সংবিধান দিবস, যা ‘সংবিধান গৃহীত দিবস’ বা ‘জাতীয় আইন দিবস’ নামেও পরিচিত, ভারতীয় ইতিহাসে এক অমূল্য অধ্যায়। চলুন, এই দিনটির গুরুত্ব এবং এর পেছনের কাহিনী গভীরভাবে জানার চেষ্টা করি।

Constitution Day of India

সংবিধান দিবসের পেছনের ইতিহাস

ভারতের সংবিধান দিবস উদযাপন শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। তবে এর আসল ইতিহাস আরও গভীর।

সংবিধান রচনার পথচলা

• ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট, যখন ভারত স্বাধীন হয়, তখন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল একটি সুসংগঠিত এবং কার্যকর শাসনব্যবস্থা তৈরি করা। এজন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।
• এই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ড. বি. আর. আম্বেদকর, যিনি আমাদের ‘সংবিধানের জনক’ হিসেবে পরিচিত।
• প্রায় ২ বছর, ১১ মাস এবং ১৮ দিন সময় ধরে বিভিন্ন আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।
• অবশেষে, ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর, ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়, যদিও এটি কার্যকর হয়েছিল ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি, যা আমরা ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে উদযাপন করি।

সংবিধান দিবস কেন উদযাপন করা হয়?


সংবিধান দিবস উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হল ভারতীয় সংবিধানের মূল্যবোধ এবং তা রচনাকারী ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। এর পাশাপাশি, এই দিন আমাদের দেশের নাগরিকদের মধ্যে সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর একটি সুযোগ।
আমাদের সংবিধানের গুরুত্ব
ভারতের সংবিধান শুধু একটি আইনি দলিল নয়, এটি আমাদের গণতন্ত্র, সমতা, এবং সাম্যের প্রতীক। বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিখিত সংবিধান হিসাবে এটি শুধু আইনের শাসনই নয়, বরং একটি সংস্কৃতি ও পরিচয় গড়ে তোলার কাজ করে।
সংবিধান দিবসের লক্ষ্য

  1. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচার: এটি আমাদের মৌলিক অধিকার, যেমন স্বাধীনতা, সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি, উপলব্ধি করায়।
  2. ঐতিহ্যের সংরক্ষণ: আমাদের সংবিধান রচনার ইতিহাস এবং এর নির্মাণকারীদের অবদান নতুন প্রজন্মকে জানানো।
  3. জাতীয় সংহতির বার্তা: সংবিধান আমাদের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার বার্তা দেয়।

২০২৪ সালের সংবিধান দিবস উদযাপন: কী হবে বিশেষ?
২০২৪ সালে সংবিধান দিবস আরও জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে। জিডি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রভাব এবং ভারতের উন্নত গণতান্ত্রিক অবস্থান এই দিবসকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
• প্রধান উদযাপন: দিল্লির পার্লামেন্ট হাউসে প্রধান অনুষ্ঠান হবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।
• শিক্ষামূলক কার্যক্রম: স্কুল, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ সেমিনার এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।
• বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি: ২০২৪ সালে, ভারতের সংবিধানের মূল্যবোধ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরা হবে, বিশেষ করে ভারতের বৈচিত্র্যময় ঐক্যের উদাহরণ হিসেবে।

ভারতের সংবিধান: কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
আপনি কি জানেন যে আমাদের সংবিধান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনন্য? চলুন, এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানি:

সংশোধনযোগ্য সংবিধান: ভারতীয় সংবিধানকে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন করা যায়, যা এটিকে নমনীয় এবং সময়োপযোগী করে তোলে।

বিশ্বের দীর্ঘতম লিখিত সংবিধান: এটি প্রায় ১,৪৬,৩৮৫ শব্দ নিয়ে গঠিত।

২২টি ভাষা অন্তর্ভুক্ত: সংবিধান ভারতীয় ভাষার বৈচিত্র্যকে সম্মান জানিয়ে ২২টি ভাষায় লেখা হয়েছে।

৩৯৫টি অনুচ্ছেদ এবং ১২টি তফসিল: সংবিধানের প্রতিটি ধারা আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থাকে সংজ্ঞায়িত করে।

ড. বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্ব: তিনি সংবিধান প্রণয়নের প্রধান ছিলেন।

সংবিধান দিবস আমাদের শুধুমাত্র ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার দিন নয়, এটি আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুজ্জীবিত করার একটি সুযোগ। ২০২৪ সালের সংবিধান দিবস উদযাপন আমাদের সবাইকে ভারতীয় সংবিধানের গভীরতর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে অনুপ্রাণিত করবে। আসুন, এই দিনটিতে আমরা আমাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হই এবং একসঙ্গে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখি।