এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় কলকাতা শহরের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং ২০২৫ অনুযায়ী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার শীর্ষ ২৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২১১তম স্থানে অবস্থান করছে, যা কলকাতা শহরের জন্য একটি বড় সাফল্য। তবে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়, যার কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতার একমাত্র প্রতিষ্ঠানের হিসেবে এই গৌরব অর্জন করেছে। অন্যদিকে, এই র্যাঙ্কিংয়ে স্থান পেতে ব্যর্থ হয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, যা একসময় কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল।
এই সাফল্যের পিছনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের একাডেমিক এবং গবেষণায় অঙ্গীকার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদান করে এবং অনেক গবেষণায় ভূমিকা রাখে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মান, গবেষণার গুণগত মান এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৃদ্ধির জন্য আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং গবেষকদের কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এই র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি এসেছে। এটি শুধু আমাদের নয়, বরং রাজ্য এবং দেশের জন্যও গর্বের বিষয়।” তাঁর মতে, বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে।
এশিয়ার কিউএস র্যাঙ্কিং ২০২৫ অনুযায়ী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ২১১তম অবস্থানে এসেছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। ২০২৪ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ২২৮তম স্থানে, তবে এখন ১৭ ধাপ এগিয়ে এসেছে। এটি এমন একটি প্রমাণ যে, বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের এবং ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কতটা গুণগত মানের শিক্ষা এবং গবেষণা ক্ষেত্রের জন্য সম্মানিত করা হচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এই উন্নতির জন্য একাধিক ক্ষেত্রে তার একাডেমিক এবং গবেষণার মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, আইআইটি খড়গপুর, যা পশ্চিমবঙ্গের আরেকটি গর্ব, এশিয়ার ৬০তম স্থানে এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৪র্থ স্থানে স্থান পেয়েছে। এর মানে হলো, আইআইটি খড়গপুরের মান এবং খ্যাতি এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি। আইআইটি খড়গপুরও শিক্ষার মান, গবেষণা এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, দু’টি প্রতিষ্ঠানই নিজ নিজ ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের পেছনে রয়েছে নানা গবেষণায় তার অগ্রগতি এবং শিক্ষার প্রতি এক আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি। আন্তর্জাতিক মানের কোর্স, ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানা প্রোগ্রাম, এবং গবেষণায় নতুনত্ব আনতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ধারাবাহিকভাবে পরিশ্রম করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের একটি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
তবে, রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি একসময় কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল, বর্তমানে কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে ৪৫১-৪৬০ এর মধ্যে রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থানও যথাক্রমে ৫২১-৫৪০ (মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), ৬২১-৬৪০ (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়), ৮০১-৮৫০ (কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়) এর মধ্যে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও তারা সকলেই নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাঙ্কিংয়ে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি, একদিকে যেমন শিক্ষার মান বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করছে, তেমনি অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিরও এই উন্নতির দিকে নজর দেওয়া উচিত। রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি আরও উদ্যোগী হন এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে মনোযোগী হন, তবে ভবিষ্যতে রাজ্য থেকে আরও বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে স্থান পেতে সক্ষম হবে।
একটি বিষয় পরিষ্কার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাফল্য শুধুমাত্র তার একাডেমিক মানের প্রতিফলন নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক উৎসাহের উৎস হতে পারে। এই সাফল্য শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি নতুন দিশা দেখাতে পারে, যা শিরোনামের মতো পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং-এ ২১১তম স্থান পেয়েছে, এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এখানে কিছু মূল কারণ তুলে ধরা হলো:
- শিক্ষার মান ও একাডেমিক উৎকর্ষতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক মানের জন্য পরিচিত। এখানে যে কোর্সগুলি পড়ানো হয়, তা আন্তর্জাতিক মানের এবং শিক্ষার্থীদের আধুনিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী কোর্স নির্বাচন করতে পারে।
- গবেষণার মান: গবেষণা ক্ষেত্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে এবং উচ্চমানের গবেষণা প্রকাশ করে থাকে। এই গবেষণা কাজের ফলস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি ঘটছে।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্মান: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা সংস্থার সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সুযোগ তৈরি করে, এবং বিশ্বব্যাপী সম্মানিত গবেষণা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করে।
- শিক্ষক এবং গবেষকদের দক্ষতা: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষকরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক মানের কাজ করছেন। তাদের গুণগত শিক্ষা এবং গবেষণা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিংকে আরো শক্তিশালী করেছে।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সুবিধা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তার আধুনিক অবকাঠামো, গবেষণাগার, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং ক্যাম্পাসের জন্যও পরিচিত। এই উন্নত সুবিধাগুলি শিক্ষার্থীদের এবং গবেষকদের জন্য আরও উন্নত পরিবেশ তৈরি করেছে।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়, পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া কার্যক্রমও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিক্ষার্থীদের উন্নত সামাজিক দক্ষতা এবং নেতৃত্ব গুণাবলী তৈরি করতে সহায়ক।
- আন্তর্জাতিক ছাত্রদের অংশগ্রহণ: বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য। এর ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা র্যাঙ্কিংয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এই সব কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কিউএস র্যাঙ্কিংয়ে সাফল্য অর্জন করেছে এবং একে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।